avertisements
Text

‘বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে অছিম পরিবহনে আগুন দেওয়া হয়েছিল’

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল, রবিবার, ২০২৪ | আপডেট: ২১ মে, মঙ্গলবার, ২০২৪

ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।

গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তরা হলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম মনির ওরফে মনির মুন্সি (৩৭), নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব মো. সাহেদ আহমেদ (৩৮), বিএনপি কর্মী এবং মনির মুন্সির ব্যক্তিগত গাড়িচালক মাহাবুবুর রহমান সোহাগ (৩৩)।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বানচালের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টন এলাকায় নারকীয় তাণ্ডব চালায় বিএনপি। এ দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজসহ অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটান দলটির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর দিবাগত রাতে ডেমরা থানাধীন দেইল্লা বাস স্ট্যান্ডে রাখা অছিম পরিবহনের একটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসে ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মো. নাইম (২২) ঘটনাস্থলে আগুনে পুড়ে মারা যান এবং অপর হেলপার মো. রবিউল (২৫) অগ্নিদগ্ধ হয়ে আহত হন। এ ঘটনায় ২৯ অক্টোবর ডেমরা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অ্যান্টি ইলিগাল আর্মস অ্যান্ড ক্যানাইন টিমে হস্তান্তর করা হয়।

তিনি বলেন, তদন্তভার গ্রহণের পর ঘটনাস্থলের চারপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ওই গাড়িটি ঘটনার দিন অগ্নিসংযোগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এ গাড়ির সূত্র ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটনের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মূল অগ্নিসংযোগকারী ও তার সহযোগীদের গ্রেপ্তার এবং ঘটনায় ব্যবহৃত গাড়িটি জব্দ করা হয়।

মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, নাশকতা অব্যাহত রাখার জন্য মনির মুন্সি তার নেতাদের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েছিলেন। নির্দেশনার মূল বিষয়বস্তু ছিল নাশকতার মাত্রা আরও বাড়ানো এবং এমন কোনো ঘটনা ঘটানো যাতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারই অংশ হিসেবে তিনি বেশ কয়েকজনকে অগ্নিসংযোগের জন্য নিয়োগ দেন। তিনি নিজে বড় একটি ঘটনা ঘটানোর জন্য তার অপর সহযোগী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিব এবং তার বন্ধু সাহেদ আহমেদকে ডেকে নেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই দিন গভীর রাতে ডেমরার দেইল্লা বাস স্ট্যান্ড এলাকা কয়েকবার রেকি করেন। অবশেষে তারা কাঙ্ক্ষিত টার্গেট ফিক্সড করে বড়ভাঙা মার্কেটে চলে যান। সেখান থেকে তারা ২ লিটারের পানির বোতলে পেট্রোল সংগ্রহ করেন রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে নিরাপদ দূরত্বে গাড়ি থামিয়ে ড্রাইভার মাহাবুবুর রহমান সোহাগ গাড়িতে অবস্থান করেন এবং মনির মুন্সি ও সাহেদ পেট্রোলের বোতল নিয়ে রাস্তার পাশে পার্ক করা অছিম পরিবহনের গাড়ির কাছে যান। ড্রাইভারের সিটের পাশে থাকা খোলা গ্লাসের অংশ দিয়ে মনির মুন্সি পেট্রোল ঢেলে দিয়ে বোতলটিও সেখানে ফেলে দেন। তারপর দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে আগুন ধরিয়ে সেই কাঠি পেট্রোলের ওপর ছুড়ে মারে। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়লে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।

তিনি বলেন, হামলাকারীরা সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য সড়কের রং সাইড দিয়ে ডেমরা এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সুফিয়া কামাল ব্রিজ দিয়ে ভুলতায় থাকা মনির মুন্সিদের মালিকানাধীন মুন্সি পেট্রোল পাম্পে রাত্রি যাপন করে। পরদিন সকাল ১০টার দিকে তারা পেট্রোল পাম্প থেকে বাসায় চলে যান। এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ ক্লু-লেস ছিল। আমরা বিভিন্ন ফুটেজ সংগ্রহ করে ও তদন্ত করে একটি গাড়ি শনাক্ত করি। পরে সেই গাড়ির সূত্র ধরে একে একে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আগুন দেওয়ার জন্য দুই লিটারের একটি পানির বোতলে মোটরসাইকেল থেকে পেট্রোল সংগ্রহ করে, সেটিও জব্দ করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মনির মুন্সি নির্দেশদাতাদের থেকে নির্দেশনা পেয়ে এ কাজ করেন। তিনি আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটাতে চেয়েছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। দলের আরও বড় পোস্ট পাওয়ার আশায় এ কাজ করেন তিনি। আমরা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নির্দেশদাতাদের নাম পেয়েছি৷ তাদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আমরা তাদেরও গ্রেপ্তার করব। তবে, তদন্তের স্বার্থে তাদের বিষয়ে এখনই কোনো তথ্য আমরা বলব না।

avertisements