avertisements
Text

‘প্রতিদিন মনে হতো আজই শেষ দিন’

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, ২০২৪ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল, রবিবার, ২০২৪

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ গণমাধ্যমকে জিম্মি অবস্থায় থাকার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন আমার প্রতিদিনই মনে হতো আজই মনে হয় জীবনের শেষ দিন।

গটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারজন জলদস্যু অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে ব্রিজে উঠে যায়। তারা সবার আগে জিম্মি করে দ্বিতীয় কর্মকর্তাকে। তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ‘মাস্টার মাস্টার’ বলে আমাকে খুঁজতে থাকে। প্রাণহানি এড়াতে আমি দ্রুত তাদের সামনে এসে হাত তুলি। তখনই জলদস্যুরা ‘অল ক্রু’ বলে চিৎকার করতে থাকে। ফাঁকা স্থানে গুলি ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে আমি সব নাবিককে ব্রিজে চলে আসার নির্দেশ দেই। মুহূর্তেই ১২ জন সশস্ত্র জলদস্যু আমাদের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। নিয়ন্ত্রণ নিয়েই তারা সবার আগে বন্ধ করে দেয় জাহাজের ইঞ্জিন। এভাবেই শুরু আমাদের ৩২ দিনের বিভীষিকার দিন।

এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ এভাবেই জানালেন সেই দুঃসহ দিনের কথা। জিম্মি অবস্থায় কাটানো নানা ঘটনা প্রবাহও তুলে ধরে বলেন, জলদস্যুরা প্রত্যেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। ওদের কারও হাতে ছিল রকেট লঞ্চার। কারও হাতে ছিল মেশিনগান। একে-৪৭, এম-সিক্সটিনসহ নানা রকমের অস্ত্র ছিল সবার হাতে। এক সঙ্গে এত অস্ত্র দেখিনি কখনোই। এগুলো যখন মাথার ওপর তাক করে রাখত তারা, প্রতিদিন মনে হতো আজই শেষ দিন।

প্রথম দিনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একটি স্পিডবোট কাছাকাছি চলে আসে। আমরা ঢেউ সৃষ্টি করে স্পিডবোটটিকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। উচ্চচাপে পানিও ছিটানো হয়। কিন্তু চারজন জলদস্যু খুব দ্রুত উঠে পড়ে জাহাজে। বিপদ আঁচ করতে পেরে তখনই ইমার্জেন্সি বাটনে চাপ দিই। যুক্তরাজ্যের এমটিওতে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। সে সময় ভিএইচএফে (বেতার) ও যোগাযোগ করি। কিন্তু কাছাকাছি কোনো যুদ্ধজাহাজ পাইনি। এ পর্যায়ে মনোবল কিছুটা ভেঙে পড়ে।

জাহাজের সুরক্ষিত কক্ষ ‘সিটাডেল’ কেন ব্যবহার করলেন না- এমন প্রশ্নের জবাবে ক্যাপ্টেন বললেন, আমরা সেটি ব্যবহার করেছি। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে বিকল্প সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মোট ২৩ নাবিকের মধ্যে ২০ জনকে সিটাডেলে যাওয়ার নির্দেশ দিই। তারা সেখানে আশ্রয়ও নেয়। কিন্তু পরে আবার তাদের ডেকে আনতে হয়েছে। তা না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। প্রাণহানিরও ঘটনা ঘটতে পারত। কারণ সিটাডেলে যাওয়ার আগে বেশকিছু কাজ করতে হয় আমাদের। এর মধ্যে জাহাজে উঠে গেল জলদস্যুরা।

ক্যাপ্টেন বলেন, জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে তিনবার স্থান পরিবর্তন করে। প্রতিবারই নতুন জলদস্যু গ্রুপ উঠতে থাকে জাহাজে। সব মিলিয়ে ৩৫ জন জলদস্যু জাহাজে ওঠে। কিন্তু শেষ দিন এমভি জাহাজে ৬৫ জন জলদস্যু ছিল।

avertisements